২৫শে জুন, ২০২৫

১১ই আষাঢ়, ১৪৩২

২৯শে জুল-হিজ্জাহ, ১৪৪৬

বুধবার

Shilpo Bangla Logo
FacebookYouTubeTelegram

জাতীয়

সাভার

আশুলিয়া

সারাদেশ

ক্যাম্পাস

চাকরি

অর্থ-বাণিজ্য

আন্তর্জাতিক

খেলা

বিনোদন

প্রবাস

ধর্ম

স্বাস্থ্য

শিক্ষা

পরিবেশ

মনোবিজ্ঞান

সাহিত্য-সংস্কৃতি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোশ্যাল মিডিয়া

ফ্যাক্ট চেক

মতামত

ইউটিউব

সর্বশেষ

ইরান থেকে আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ৩ জন নিহতের দাবি

সম্পূর্ণ নিউজ

দৌলতদিয়ায় তালাবদ্ধ ওয়ার্ডরোবে মিলল যৌনকর্মীর লাশ

ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

দৌলতদিয়ায় তালাবদ্ধ ওয়ার্ডরোবে মিলল যৌনকর্মীর লাশ

রিপোর্টার: রিফাত বিল্লাহ,প্রকাশ: ২৫ জুন, ২০২৫ এ ০১:১২ AM

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে তানিয়া আক্তার বুলু (৩০) নামে এক যৌনকর্মীর নিজ কক্ষের ওয়ার্ডরোব থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। নিহত তানিয়া বরিশাল জেলার বন্দর থানার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা।

 


 
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকাল সাড়ে ৬ টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির বাড়িওয়ালা শিরিন-সরোয়ার মণ্ডল দম্পতির বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষের ওয়ার্ডরোব থেকে লাশ উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ। পুলিশ আলামত হিসেবে গলায় প্যাঁচানো মুঠোফোনের কেব্‌ল চার্জার, একটি মুঠোফোন, অ্যাশট্রে জব্দ করেছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িতে যৌনকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক লোকজনের ভিড়। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় পশ্চিম-উত্তর দিকে একটি কক্ষে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করতেন ওই যৌনকর্মী।

 

 

বাড়ির ভাড়াটে এক যৌনকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ সকাল ৯টার দিকে তাকে (যৌনকর্মী) বাড়ির গেটে দেখেছি। এ সময় ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী এক যুবক তার ঘরে প্রবেশ করেন। ঘণ্টাখানেক পর ওই যুবক ঘর থেকে বের হলেও সে (যৌনকর্মী) আর বের হয়নি। দুপুর গড়িয়ে গেলেও তাকে না দেখে আমরা সবাই খুঁজতে থাকি। ভাড়া বাড়ির মালিক সরোয়ার মন্ডলকে খবর দিলে তিনি এসে তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে একপর্যায়ে বিকেল পাঁচটার দিকে তানিয়ার ঘরে থাকা ওয়ারড্রব তালাটি ভেঙে ফেলে। পরে ওয়ার্ডরোব খুলতেই দেখি, ওয়ার্ডরোবের মধ্যে তার মরদেহটি উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। এসময় আমরা গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে লাশটি উদ্ধার করে।’

 

 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ।

 

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ার থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তানিয়া নামের ওই নারী যৌনকর্মীর মরদেহ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার গলায় মোবাইল চার্জারের তার পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। হত্যার কারণ ও জড়িতদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।’

 

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (২৩ জুন) সকালে দৌলতদিয়া যৌনপল্লি-সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত ডোবার পাশে নজরুল ব্যাপারী (৩০) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে নজরুলের বাড়ি প্রায় ১০০ গজ দূরে।

 

এমন ঘটনা কী এই প্রথম 

 

এমন ঘটনা এই প্রথম নয় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে। এর আগেও এমন ঘোটনা ঘটেছে অনেক। কিছুর তদন্ত সফলার মুখ দেখেছে আর বেশিরভাগই হারিয়ে গিয়েছে ফাইলের ভিড়ে। 

 

গত ৫ এপ্রিল দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে রুপালী আক্তার রুপা (২৫) নামে এক যৌনকর্মী । 

 

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পূর্বপাড়া যৌনপল্লীতে মিতা আক্তার ওরফে (সুমি) (৩০) নামে এক যৌনকর্মীকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ধারনা করা হয় কোন কাস্টমার তাকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে।

 

২০২১ সালের ৯ অক্টোবর সকালে পল্লীর বাড়িওয়ালা সুজন খন্দকারের বাড়ি থেকে রিতু বেগম (২৮) নামে এক যৌনকর্মীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

২০২১ সালের ২১ মার্চ  দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর একটি বাড়ি থেকে রেখা আক্তার (২৩) নামে এক যৌনকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 



২০২০ সালের ৫ আগস্ট গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লী সংলগ্ন ডোবায় ভাসমান অবস্থায় শাহনাজ আক্তার টুনি (২৫) নামের এক যৌনকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। 

 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নেপথ্যে কোনও খদ্দের নয়, বরং থাকে তারই ‘ভালোবাসার মানুষ’, ‘প্রেমিক’, ‘বাবু’ বা ‘কথিত স্বামী’। যৌনকর্মীরা তাদের প্রেমিককে ‘বাবু’ বলেই সম্বোধন করে। মূলত এসব ‘বাবু’দের মাধ্যমেই যৌনপল্লিতে আসে নারীরা। যৌনকর্মীদের আয়ের একটি বড় অংশও তারা নিয়ে নেয়। তারপরও যৌনকর্মীদের আয়ের টাকায় নিয়েই এসব খুনাখুনির ঘটনা ঘটে প্রায়ই।

 

মূলত কাজের আশ্বাস, প্রেমের ফাঁদ কিংবা বিয়ে করে, এমনকি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নারীদের এইখানে নিয়ে আসে বা বিক্রি করে দেয় এসব বাবুরা। এমনকি অস্বচ্ছল পরিবার বা দূর আত্মীয় সম্পর্কিত পরিবার নারীদের বিক্রি করে দেয়। তবে টাকা আয়ের জন্য অন্য ভালো উপায় না পেয়েও অনেকে এই পথে আসেন। 

 

যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনের কর্মীরা জানিয়েছেন, যৌনকর্মীরা বেশিরভাগ সময় তার পরিচিত ব্যক্তি ও বাবুদের মাধ্যমেই খুন হয়। অপরিচিত খদ্দেররা কখনও পল্লিতে বা হোটেলে গিয়ে খুন করার সাহস পায় না। কারণ, ওই জায়গা যৌনকর্মীদের, সেখানে অপরিচিত কেউ গিয়ে খুন করতে পারে না। অতীতে অনেক ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, খুনের নেপথ্যে পরিচিত কোনও বাবু বা দীর্ঘদিনের প্রেমিক বা খদ্দের।

 

যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘জীবনের আলো’র সভাপতি শাহানাজ বেগম বলেন, ‘যৌনপল্লি কিংবা ভাসমান যৌনকর্মীদের কেউ না কেউ ‘বাবু’ বা ‘প্রেমিক’ থাকে। কেউ কেউ তাদের স্বামীও পরিচয় দেয়। এসব ব্যক্তি মেয়েদের উপার্জিত টাকায় ভাগ বসায়। কখনও কখনও মেয়েরা কিছু টাকা লুকিয়ে রাখে, সেই টাকাও বাবুরা হাতিয়ে নিতে চায়। তখন দ্বন্দ্ব হয়, খুন হয়। এসব ব্যক্তি মূলত দালাল প্রকৃতির। তারা মেয়েদের দিয়ে এভাবেই আয় করে।’

 

তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌনকর্মীদের খুন করা হয়, কিন্তু কেউ হিসাব রাখে না। যৌনকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সবসময় কথা বলে আসছি, কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না।’

 

তবে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনগুলো। কারণ, সারা দেশের হিসাব কেউ রাখে না, কেবল নিজ নিজ সংগঠনগুলোর সদস্যরা হত্যার শিকার হলে হিসাব রাখে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।

 

এছাড়া দৌলতদিয়া যৌনপল্লীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ যৌন উত্তেজক ওষুধের রমরমা ব্যবসা। অনুমোদনহীন ক্ষতিকর ঔষুধ সেবনে প্রতিনিয়েই মৃত্যু ঘটছে এইখানে বাস করা নারীদের এবং এইখানে আসা ‘খদ্দের’দের। যে ট্যাবলেট খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা হয় যৌন পল্লীর বাড়িয়ালীরা সে ট্যাবলেট খাইয়ে দ্রুত দেহবর্তী করে তোলে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের। দ্রুত শরীর বাড়িয়ে তাদেরকে খদ্দের উপযোগী করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এতে ওই সকল মেয়েদের কিডনি নষ্ট হয়ে যায় কয়েক বছর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। তাদের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই ধরনের রোগে একাধিক মুত্যূর খবর পাওয়া গেছে দৌলতদিয়া পল্লীতে। অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িয়ালীরা তাদেরকে বের করে দেয় পল্লী থেকে। বাড়িতে ফিরে তারা মারা যায় বিনা চিকিৎসায়।

 

এছাড়াও স্থানীয় পুলিশ জানায়, এখানে রাজনৈতিক পাওয়ার গ্রুপ রয়েছে, যারা এইসব মেয়েদের কর্মের লভ্যাংশ, মুনাফা পেশিশক্তির জোরে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি করে ভোগ করে আসছে। 

 

অভিযোগ আছে, যৌন পল্লী ঘিরে আছে প্রভাবশালী কিছু সুদখোর মহাজন। তারা এখানে চড়াসুদে টাকা খাটায়। পুলিশের সঙ্গে যোগসাজসে এরা টার্গেট করে বিপদে ফেলে যৌনকর্মীদের। আইনের মারপ্যাচে ফেলে টাকা দিতে বাধ্য করে পুলিশ এবং স্থানীয় মাস্তানদের।

 

কেমন আছে এখন দৌলতদিয়া

 

দেশেরতো বটেই এশিয়ারও অন্যতম বৃহৎ যৌনপল্লী (গণিকালয়) রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া। এখানে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন কয়েক হাজার নারী। এদেরকে ডাকা হয় পণ্যস্ত্রী, গণিকা, যৌনকর্মী কিংবা পতিতা নামে। 

প্রতিদিন এখান থেকে যৌন সেবা নেন দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। 

 

২০২৩ সালের এক জরিপ অনুযায়ী জানা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৫০ জন নিয়মিত রয়েছেন। বাকিরা অনিয়মিত থাকেন এখানে। এখানে প্রায় ৩০০টি বাড়ি রয়েছে। যৌনপল্লিতে শিশুর সংখ্যা ৬০০ জন এবং ৩৫০ জন বয়স্ক নারী রয়েছেন।

 

মুক্তি মহিলা সমিতির সম্প্রতি চালানো জরিপ অনুযায়ী' এখানে ১ হাজার ৫০ জনের মতো যৌনকর্মী, ২৮১ জন বাড়িওয়ালি ও ৫০০ টি শিশু রয়েছে। এর বাইরেও বয়স্ক নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মিলে আরও এক হাজারসহ প্রায় চার হাজার বাসিন্দা রয়েছেন।

গণস্বাস্থ্য সংস্থা দৌলতদিয়ার জরিপ অনুযায়ী, দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন যৌনকর্মীসহ প্রায় চার হাজার মানুষ বাস করেন। 

 

এদের সবাইই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি/এইডসসহ নানা যৌন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।



 

সরকার স্বীকৃত হলেও স্থানীয়দের কাছে একটি ‘বিষফোঁড়া’ এই যৌনপল্লী। এখানকারকর্মীরাও অবহেলিত। 

 

এমনকি এখানে কোন যৌনকর্মী মারা গেলে তার মরদেহটিও সমাহিত করা হতো না এতদিন। মরদেহ পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়া কিংবা রাতে আঁধারে কোথাও পুঁতে ফেলা হতো। পল্লীর পাশে একটি গোরস্থান হলেও সেখানে জানাযার নামাজ ও কাফনের কাপড় ছাড়াই যৌনকর্মীর মৃতদেহ মাটি চাপা দেওয়া হতো।

 

যৌনকর্মীরা জানান, স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা এতদিন যৌনকর্মীদের জানাজা পড়ানোর অনুমতি দিত না। ফলে দৌলতদিয়ার কেউ মারা গেলে তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হতো বা রাতের অন্ধকারে মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। 

 

যৌনকর্মীদের একটি দলের প্রধান ঝুমুর বেগম বলেন, ‘সকালে মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য আমরা যদি কোনো মৃতদেহ ঘর থেকে বের করতাম স্থানীয়রা বাঁশ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের তাড়া করতো। মনে হতো কোনো মানুষ নয়, একটি কুকুর মারা গেছে।’

 

তবে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এইখানে কোনো নারীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, সেই নারীর নাম হামিদা বেগম। 



এইখানের বাসিন্দারা সরকারিভাবেও অবহেলিত। তাদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে গ্রামের নামের স্থানে লেখা হয়েছে ‘পতিতালয়’। যা তাদের পুনর্বাসনে বাঁধা সৃষ্টি করবে। 

 

 

তাছাড়া এইখানে জন্ম নেওয়া শিশুদের পিতৃপরিচয় না থাকায় জন্মনিবন্ধন হয় না বেশিরভাগের। বেশির ভাগক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও যৌনকর্মী ও পল্লির শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের মাধ্যমে অস্থায়ী অভিভাবক দিয়ে জন্মনিবন্ধন করা হচ্ছে। তবে ওই সব অস্থায়ী অভিভাবকেরাও থেকে যাচ্ছেন শঙ্কার মধ্যে। কারণ তাদের ঔরসজাত সন্তানদের পাশাপাশি আইন অনুযায়ী ভবিষ্যতে জন্মনিবন্ধন সূত্রে এইসব শিশুরা নিজেদেরকে তাদের ওয়ারিশ হিসেবে দাবি করতে পারবে।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যৌনপল্লীতে জন্ম নেয়া বেশির ভাগ শিশু-কিশোররাই বর্তমানে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া চুরি, ছিনতাই, নারী পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। বাইরের প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী ও নারী পাচারকারীরা তাদের এ ব্যবসায় নামিয়ে নিজেরা ফায়দা লুটছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা যায়।

 

৫০ এর অধিক বয়সী নারীদের জীবন সবচেয়ে খারাপ হয়ে থাকে এইখানে। কারণ এসময় তাদের আয় কমে যায়। 

 

পল্লির এক যৌনকর্মী বলেন, ‘পল্লির অবস্থা একসময় ভালো ছিল। বর্তমানে পল্লির অবস্থা খুব খারাপ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে লোকজন আসে না। সবাই পদ্মা সেতু হয়ে যায়। তাই আমাদের হাহাকার শুরু হয়েছে। আমরা এখন চলে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। সরকার যদি আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে বেঁচে থাকতে পারব।’

 

পল্লির আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘দৌতলদিয়া ফেরিঘাটে যখন যানজট লেগে থাকত তখন ভালো ছিলাম। তখন পল্লিতে অনেক খদ্দের আসত। কিন্তু এখন কেউ খবরও নেয় না। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই। সরকার যদি আশ্রয়ণের ঘরে থাকার জায়গা করে দিত, তাহলে আমরা চলে যেতাম।’

 

উল্লেখ্য, পদ্মাসেতু হওয়ার আগে এইখানের কোন কোন যৌনকর্মী মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতো। এইখানের সর্দারনী বা বাড়িওয়ালীর প্রতিদিনের সর্বনিম্ন আয় করতো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ‍এছাড়াও অবস্থাশালী বাড়িওয়ালীদের আয় হতো দিনে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।

 

বাংলাদেশে কি যৌনব্যবসা বৈধ?

 

দেশে যৌনপল্লির সংখ্যা এখন ১১টি। কোনো কোনো সূত্রে ১৮টি।  টাঙ্গাইলের কান্দাপাড়া, ময়মনসিংহের গাঙ্গিনাপাড়, ফরিদপুররের রথখোলা, সিলেটের সন্ধ্যাবাজার প্রভৃতি।

 

সরকার স্বীকৃত হলেও স্থানীয়দের উৎপাত আছে এইখানে। 

 

যৌনব্যবসার প্রশ্নে বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান এই ক্ষেত্রে বিরোধী অবস্থানে আছে।

 

সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে "রাষ্ট্র জুয়া এবং যৌনব্যবসার বিরুদ্ধে কার্যকরী সুরক্ষা প্রদান করিবে” 



মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ আইনও যৌনব্যবসা বিরোধী। 

 

কিন্তু ২০০০ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশে যৌনব্যবসা আইনত বৈধ। 

 

২০০০ সালে টানবাজার-নিমতলী যৌনপল্লী উচ্ছেদের (২৪ জুলাই ১৯৯৯) প্রতিবাদে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর এনফোর্সমেন্ট অফ হিউম্যান রাইটস (BSEHR) ও অন্যান্য এনজিও হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। পিটিশনের কারণ হিসেবে পুলিশ ও প্রশাসন কর্তৃক যৌনকর্মীদেরদের অবৈধভাবে, জোরপূর্বক তাদের বাসস্থান থেকে উৎখাত করা এবং এর প্রেক্ষিতে যৌনবৃত্তিতে নিযুক্ত নারীদের নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ প্রদান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়।

 

যদিও পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি তারা ভবঘুরে আইন ১৯৫০ অনুসারে কাজ করেছে। 

 

আদালত বিস্তৃত ব্যাখ্যায় বলেন যৌনপল্লীতে থাকা নারীরা সমাজের সবচেয়ে কম সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার ফলাফল হিসেবে তারা এই পেশায় জড়িত আছেন। পুলিশ ও স্থানীয় দ্বারা যৌনকর্মীদের তাদের আবাস থেকে উৎখাত সংবিধান পরিপন্থী ও অবৈধ। আদালত টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া ও আটকে রাখাকেও অবৈধ ঘোষনা করেন।

 

এই ল্যান্ডমার্ক পিটিশনের রায়ে নারী যৌনকর্মী অনুর্ধ ১৮ বছরের হলে এবং যৌন ব্যবসাই তার আয়ের একমাত্র উৎস প্রমান করতে পারলে তিনি বৈধভাবে যৌনব্যবসায় অংশগ্রহন করতে পারেন। 

 

যৌনকর্মী নোটারি পাবলিকের সাহায্যে প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এফিডেবিট দিয়ে বৈধ ভাবে কাজ করার জন্য নিবন্ধিত হন হলফনামা কিংবা এফিডেবিটে তিনি ঘোষনা করেন তার বয়স অনুর্দ্ধ আঠারো এবং জীবনধারনের কোন উপায় না থাকায় কোন মহলের বলপ্রয়োগ ছাড়া স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছেন।

 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আইনে পুরুষ এবং ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুর যৌনব্যবসা নিষিদ্ধ।

 

সরকারের তিনটি মন্ত্রনালয় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রনালয় এসব যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে। 

 

বেসরকারি সংস্থা ‘সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)’ ২০১৭-১৮ সালে যৌন কর্মীদের সংখ্যা নিরূপন করার জন্য জরিপে বলা হয়, দেশের ১১টি যৌনপল্লিতে প্রায় চার হাজার মেয়ে কাজ করেন। 

রাজবাড়ীগোয়ালন্দদৌলতদিয়াযৌনপল্লীযৌনকর্মীমরদেহ
সাম্প্রতিক খবর
বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত দুটি ইসলামী ও একটি নবীন দল : প্রিন্স

সারাদেশ

বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত দুটি ইসলামী ও একটি নবীন দল : প্রিন্স

সিলেটে মাঠে সরব ১২ ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন, বিএনপি বলছে সবগুলো ভুয়া

সারাদেশ

সিলেটে মাঠে সরব ১২ ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন, বিএনপি বলছে সবগুলো ভুয়া

দৌলতদিয়ায় তালাবদ্ধ ওয়ার্ডরোবে মিলল যৌনকর্মীর লাশ

সারাদেশ

দৌলতদিয়ায় তালাবদ্ধ ওয়ার্ডরোবে মিলল যৌনকর্মীর লাশ

খুলনায় পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের পর পুলিশে দিল জনতা

সারাদেশ

খুলনায় পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের পর পুলিশে দিল জনতা

বাংলার জমিনে আল্লাহর দ্বিন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী : ফখরুদ্দীন খান রাযী

সারাদেশ

বাংলার জমিনে আল্লাহর দ্বিন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী : ফখরুদ্দীন খান রাযী

নওগাঁর মান্দায় বাড়ছে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী, বারান্দায় চিকিৎসা

সারাদেশ

নওগাঁর মান্দায় বাড়ছে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী, বারান্দায় চিকিৎসা

রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীকে আটকে মারধরের অভিযোগ, স্থানীয়দের হামলা, অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ

সারাদেশ

রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীকে আটকে মারধরের অভিযোগ, স্থানীয়দের হামলা, অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ

ধামরাইয়ে নিজ ঘর থেকে মা ও ২ ছেলের মরদেহ উদ্ধার

সারাদেশ

ধামরাইয়ে নিজ ঘর থেকে মা ও ২ ছেলের মরদেহ উদ্ধার

গাজীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

সারাদেশ

গাজীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

ফ্লাইওভারে বাসের ধাক্কায় এসআই নিহত

সারাদেশ

ফ্লাইওভারে বাসের ধাক্কায় এসআই নিহত