সাভারের আশুলিয়ায় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দি ফ্রিডম ফান্ডের সহায়তায় উন্নয়ন সংগঠন রূপান্তরের উদ্যোগে Enhancing Protection of CST Survivors in Bangladesh Program বাংলাদেশের অভ্যান্তরীণ পাচার এবং যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম বারের মতো কমিউনিটি–ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটি (CBCPC) গঠন এবং সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

বুধবার (২৮ মে) সকাল ১১ ঘটিকায় সাভার উপজেলার আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের হলরুমে উক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

 

 

শিশু পাচার ও নানাভাবে যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষায় গণমাধ্যমসহ সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশা এবং পরিবারের লোকজনদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়ন নানাভাবে ঘটতে পারে, আবার এই শিশুদের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন চক্র পাচারের ফাঁদে ফেলে থাকে। গ্রামে অথবা শহরের যেকোনো সামাজিক অবস্থান এবং যেকোনো বয়সের শিশুরা যৌন নিপীড়ন ও পাচারের শিকার হতে পারে। তবে প্রতিবন্ধী শিশু, কর্মজীবী শিশু, পথে বসবাসকারী শিশুসহ কিছু শিশু তাদের অবস্থার কারণে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অপরদিকে সচ্ছল, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহারের অবাধ সুযোগের কারণে বুঝতে পারছে না কীভাবে তারা যৌন বা পাচার ঝুঁকির ফাঁদে পা দিচ্ছে। শিশু পাচার ও যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।

 

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দি ফ্রিডম ফান্ডের সহায়তায় উন্নয়ন সংগঠন রূপান্তর এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। উল্লেখ্য যে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর, যা দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি’র উন্মোচন ঘটিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্র চর্চা শক্তিশালীকরণ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রসার এবং পরিবেশ সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ এই লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রকল্পটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় ধামসোনা, আশুলিয়া, ইয়ারপুর ইউনিয়নে এবং সাভার পৌরসভায় পরিচালিত হচ্ছে। শিশু সুরক্ষা কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ২ নং (৪,৫,৬) ওয়ার্ডের সদস্য আসমা বেগম এবং আশুলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার হাজী মো: বেলায়েত হোসেন মোল্লা।

 

কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটির দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়ে সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা করেন উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের ঢাকা জেলার কো-অর্ডিনেটর জেভিয়ার বিশ্বাস এবং সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলা সহায়তাকারী মো: শামসুল হক।

 

একই সাথে অত্র ইউনিয়নের আশুলিয়া বস্তি এলাকার (২৫) পঁচিশ জন ঝুঁকিপূর্ণ ও অসহায় এবং জন্মনিবন্ধন নাই এমন শিশুদের নামের তালিকা প্রদান করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়। পরে এ বিষয়ে ত্রৈমাসিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা সহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আশুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রোকেয়া আক্তার বলেন, 'বর্তমান সমাজে নিজেদের আত্মীয় স্বজন দ্বারাও অনেক শিশু ইভটিজিং এর শিকার হয়, পথে ঘাটে ও স্কুল এবং বাসার আশপাশের দোকানদারদের থেকেও শিশুরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়, বাবা মা বাড়িতে না থাকার কারণে বাবা এবং দাদার বয়সি লোকের দ্বারা শিশুরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। দারিদ্রতার কারণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একই রুমে পরিবারের সকলে বসবাস করছে ফলে সেখানেও মানুষিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তাই শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মুক্তিও প্রয়োজন।'

 

তিনি আরও বলেন, 'ছেলে মেয়েদের বয়ঃস্বন্ধিকালীন বয়সের সময়ে মা বাবা ভাই বোন সবাই কে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা উচিত। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে।'  

 

উক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সম্মানীয় ব্যক্তি কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইলিম মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাজী মো. আহসানউল্লাহ, আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মতিউল আলম। কিশোরী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমরীন আক্তার । সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মসজিদের ইমাম মো: মাওলানা আমির হোসেন এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ । 

 

পরিশেষে রূপান্তর প্রতিষ্ঠানের এমন আয়োজন এবং এই কার্যক্রমকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কমিটির প্যানেল চেয়ারম্যান চেয়ারপারসন মো: বেলায়েত হোসেন মোল্লা এবং সকল সদস্য আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা শিশু সুরক্ষা কমিটির দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে যে ধারণা আজ পেয়েছি তা অত্র ইউনিয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে রূপান্তর এনজিও প্রতিনিধিদের সকল ধরনের কাজে সহযোগিতা করবো।